টুপটুপ করে শিশির ঝরে পড়ছে







                          টুপটুপ করে
                       শিশির ঝরে পড়ছে
  লেখক ঃখাদিজা হক 


ফজরের আযান হতে এখনও কিছুটা সময়
বাকি আছে। চাঁদ নেই আকাশে, দু একটা
তারা এখনও মিটিমিটি করে জ্বলছে।
কার্তিক মাসের শেষ। টুপটুপ করে
শিশির ঝরে পড়ছে। আমি শিশির
ভেজা ঘাস মারিয়ে সন্তর্পনে
এগিয়ে যাচ্ছি। পা দুটো ভিজে
যাচ্ছে, সাথে সেলোয়ারও। ঘাসের
ডগা গুলোও মাঝে মাঝে পায়ের
আঙ্গুলের মাঝখানে আটকা পরে চরচর
করে ছিড়ে যাচ্ছে। আমি শব্দ না করে
দৌড়ানোর চেষ্টা করছি কিন্তু
নিঃশ্বাসের এত জোরে জোরে শব্দ
হচ্ছে। আমি হাঁপাচ্ছি! আমি বুঝতে
পারছি যতটা না ক্লান্ত হচ্ছি তারচে
বেশি ভয় পাচ্ছি। বুকটায় মনে হচ্ছে
কেউ হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছে।
টিনের বাড়িটা পেতে সামনে এখনও
অনেকখানি পথ বাকি। আমি বড় বড়
কাশবনের আড়ালে বসে পড়লাম একটু
জিরিয়ে নেয়ার জন্য।
কিন্তু একি! সামনে তাকিয়ে দেখি
দুটো চোখ আগুনের ভাটার মত জ্বলছে!
ওটা কি নেকড়ে নাকি শিয়াল কুকুর,
আমার ভয়ে যেন আত্মারাম
খাচাছাড়া!
আমি কিছু পড়তে চাইলাম কিন্তু দেখি
গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।
কোনও কিছু মনে আসছে না। ভাবলাম
বাঁচতে হলে এখান থেকে পালাতে
হবে।
এক মানুষ নামক পশুর হাত থেকে
পালিয়ে তো আরেক পশুর হাতে জীবন
দিতে পারিনা!
আমি ঘুরে উঠে উর্দ্ধশ্বাসে দিলাম
দৌড়! এক দৌড়ে গিয়ে টিনের
বাড়িটার ভেতরে গিয়ে তাদের
দরজার সামনে গিয়ে পরে জ্ঞান
হারিয়ে ফেললাম।
ওই সময় বাড়িওয়ালা তাহাজ্জুদ
নামাজের জন্য উঠছিলেন। ধপাস শব্দ
শুনে এগিয়ে এলেন। তার স্ত্রীকে
ডেকে এনে ধরাধরি করে ঘরে নিয়ে
গেলেন। চোখে মুখে জলের ঝাপ্টা
দিয়ে জ্ঞান ফেরালেন।
জ্ঞান ফিরে দেখি অনেক গুলো মুখ
আমার মুখের ওপর ঝুকে আছে।
আমি এক এক করে সব ঘটনা খুলে বললাম,
কিন্তু তারা বিশ্বাস করল বলে মনে হল
না।
আমি মুরব্বি লোকটাকে বললাম, চাচা!
আপনার যদি আমার কথা বিশ্বাস না হয়
তাহলে গিয়ে দেখুন, বাঁধের ওপরে
আমার এখনও একটা আংটি পরে আছে।
ওদের সাথে ধস্তাধস্তি করার সময়
আংটিটা আমার পায়ের কাছে
পরেছিল, আর আমি ওটা পা দিয়ে
অনেক্ষণ চাপা দিয়ে রেখেছিলাম।
আমার কথামত চাচা লাইট নিয়ে
আংটি খুঁজতে গেল। গিয়ে দেখে
ওখানে আরও তিন চারটে ছেলে কি
যেন খুঁজছে! চাচাকে এত সকালে ওরা
ওখানে দেখে হকচকিয়ে যায়।
জিজ্ঞেস করে চাচা এত সকালে
আপনি এখানে?
চাচা বলে হ্যাঁ, এই একটু হাটতে বের
হয়েছিলাম!
চাচাকে আমি জায়গাটা বলে
দিয়েছিলাম। একটু পর চাচা হাসতে
হাসেত আংটিটা এনে আমায়
ফিরিয়ে দিল।
আমি আংটির দিকে একদৃষ্টে
তাকিয়ে আছি, চোখের কোণে জল।
কতশত স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই আংটির




Share on Google Plus

About কালি বিহীন মুক্ত কলম

    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment